প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০৯:৩০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লাভ হোক, লোকসান হোক কর দিতে হবেই

লেনদেন কর বাড়ছে নতুন বাজেটে

ব্যবসা সফল হোক বা ব্যর্থ কর দিতে হবে যেকোনো অবস্থায়। এমন প্রস্তাবই এসেছে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নতুন অর্থবিলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লেনদেন কর (টার্নওভার ট্যাক্স) বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হবে, যা আগে ছিল ০.৬ শতাংশ।

এই লেনদেন কর মানে, কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য বা সেবা বিক্রি করে ১০০ টাকা আয় করলে তার ওপর ১ টাকা কর দিতে হবে লাভ হোক বা লোকসান, তাতে কিছু আসে যায় না। সরকার এই অর্থ নেবে আয়কর হিসেবেই, ভ্যাট বা মূসকের বাইরে।

লোকসানে গেলেও ছাড় নেই

ধরা যাক, একটি কোম্পানি ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। সে ক্ষেত্রে লেনদেন কর দিতে হবে ১ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে দেখা গেল, কোম্পানিটি ১০ কোটি টাকা লোকসানে পড়েছে। তবুও সরকার সেই ১ কোটি টাকার কর নেবে যদিও এটি ‘লেনদেন কর’ নামে পরিচিত, মূলত এটি করপোরেট করেরই রূপান্তর।
তবে এবারের বাজেটে বলা হয়েছে, এই কর পরবর্তী বছরে আয়কর হিসেবে সমন্বয়ের সুযোগ থাকবে।

কারা বেশি চাপে

এই কর সবচেয়ে বেশি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে লোকসানে থাকা বা খুব কম মুনাফার কোম্পানির জন্য। বিপরীতে, বড় মুনাফাকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব তেমন নয় কারণ তারা বছরের শেষে আয়কর সমন্বয় করে দিতে পারে।

দেশে লেনদেন কর নতুন কিছু নয়। ব্যবসায়ীরা বহু বছর ধরেই এটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ খাত এই কর কমানোর দাবি করেছিল। বাজেটে তাদের জন্য কিছু স্বস্তি এসেছে—হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে তামাক, কোমলপানীয় ও তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে আগের মতোই ৩ শতাংশ কর বহাল থাকছে।

নতুন করে কর বাড়ানো হয়েছে অন্যান্য সাধারণ কোম্পানির জন্য তাদের বিক্রির ওপর এখন ১ শতাংশ লেনদেন কর দিতে হবে। সাধারণ করপোরেট করের হার ধরা হয়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশ, যা ব্যাংক লেনদেন বাড়ালে ২৫ শতাংশে নামতে পারে। এই কর ও লেনদেন কর একে অপরের সঙ্গে সমন্বয়যোগ্য।

নতুন বিনিয়োগে কিছু ছাড়

অর্থবিলে আরও বলা হয়েছে, তামাক, টেলিকম ও পানীয় খাত বাদে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎপাদন শুরুর প্রথম তিন বছর লেনদেন কর হবে মাত্র ০.১ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ

কর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেড–এর পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া মনে করেন, ১ শতাংশ লেনদেন কর লোকসানে থাকা বা সীমিত মুনাফার কোম্পানির জন্য ‘বড় ধাক্কা’।
তার ভাষায়, “অনেক কোম্পানিকে মূলধন ভেঙে কর দিতে হবে। এ ধরনের নীতি করফাঁকি উৎসাহিত করে, আর আইন মেনে চলা কোম্পানিগুলোকেই শাস্তি দেয়।”
তিনি আরও বলেন, ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বড় ধাক্কা এসেছে  করহার ০.২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।

করপোরেট করের নতুন কাঠামো

অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ২০২৫–২৬ করবর্ষে পুঁজিবাজারে অনিবন্ধিত কোম্পানির কর হবে ২৭.৫ শতাংশ। তবে যদি প্রতিষ্ঠানটির একক লেনদেন ৫ লাখ টাকার বেশি এবং বার্ষিক মোট লেনদেন ৩৬ লাখ টাকার বেশি হয় সব লেনদেন ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে করতে হবে; তখন তারা ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে পারবে।
২০২৬–২৭ ও ২০২৭–২৮ করবর্ষেও এই হার বহাল থাকবে।

পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানির জন্য করহার কিছুটা কম ২২.৫ শতাংশ, যা ২০ শতাংশে নামবে, যদি সব লেনদেন ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে হয়। পরবর্তী দুই বছরেও একই নিয়ম প্রযোজ্য থাকবে।

  • সর্বশেষ